দেশের যেকোনো শহরের বেশির ভাগ মানুষই ভাড়াটিয়া। অন্তত বাড়িওয়ালার তুলনায় ভাড়াটিয়া বেশি। বাড়ির মালিকের কথাই শেষ কথা হয় যেহেতু বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই। ভাড়ার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে চুক্তি হওয়ার বিধান আছে, কিন্তু সেটি হয়ে থাকে বাড়িওয়ালার সুবিধামতোই। শহরের অনেক বাড়িওয়ালাই রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে বাড়ির গেটে তালা দিয়ে দেন, দারোয়ান না থাকায় চাবি নিজের কাছেই রেখে দেন। গেইট খুলেন সকালে নিজের ইচ্ছেমতো সময়ে। এ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের পড়তে হয় বিভিন্ন ঝামেলায়। রাত দশটায় বাড়ির গেটে তালা দেওয়া নিয়ে কি কি ঝামেলায় পড়তে হয় চলুন জেনে নেয়া যাক গল্পে গল্পে-
কথায় আছে, বউয়ের ভয়ে অনেক পুরুষই অফিসে সময় বেশি দেয়। নাঈম সাহেবও সেই দলের লোক। সারাদিন পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বউয়ের ক্যাট ক্যাট থেকে রক্ষা পেতে নাঈম সাহেব প্রায়ই মধ্যরাতে বাড়ি ফিরেন। অন্তত ঘুম থেকে উঠে ক্যাট ক্যাট করে নিজের ঘুম নষ্ট করবে না তার স্ত্রী। কিন্তু নাঈম সাহেবের এই সুখও বেশিদিন স্থায়ী হলো না বোধহয়। কয়েকদিন আগে এক রাতে বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাট থেকে থেকে চুরি হয়েছে। বাড়িওয়ালা চুরি বন্ধের স্থায়ী সমাধান হিসেবে রাত ১০টার মধ্যে বাড়ির গেইটে তালা দেওয়ার নিয়ম করেছেন। যে তালার চাবি শুধুমাত্র বাড়িওয়ালা আজম সাহেবের কাছেই থাকবে। অফিস থেকে নাঈম সাহেবের ফিরতে দেরী হয় জেনেও তিনি নাঈম সাহেবকে চাবি দিতে নারাজ। প্রতিদিন বাসার নিচে এসে চাবির জন্য ফোন দেওয়া, গেইট খুলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা বেশ বিরক্তিকর কাজ। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাঈম সাহেব বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরলেন আজম সাহেবের কাছে।
নাঈম সাহেব বলতে লাগলেন, বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন না থাকায় বাড়িওয়ালার কথাই শেষ কথা হতে পারে না। ভাড়াটিয়ার কিছু সুবিধা অসুবিধাও দেখা উচিত। রাতের বেলায় গেইটে আলাদা তালা দেওয়ার বেশকিছু কুফল আছে অথচ আপনারা বাড়িওয়ালার সেগুলো বুঝতেই চান না। সারাদিন পরিশ্রম করে অফিস শেষে বাসায় এসে গেইটের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা বেশ বিরক্তিকর কাজ। বাড়িতে আগুন লাগলে দ্রুত বের হতে না পেরে হতাহতের একটা সম্ভাবনা থাকে। ভূমিকম্প হলে বাড়ির মালিক কখন গেইটের তালা খুলবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জরুরী একজনকে হাসপাতালে নিতে হলে আগে বাসার মালিকের কাছে যেতে হবে তারপর যেতে হবে হাসপাতালে, এমনও হতে পারে হাসপাতালে যেতে দেরী হওয়ায় রোগী মারা গেল বা বড় কোনো বিপর্যয় হলো।
সব শুনে আজম সাহেব বলতে লাগলেন, এভাবে তো বিষয়টি ভেবে দেখিনি। অন্য বাড়িওয়ালার কথা জানি না, আমি খুব দ্রুতই ভাড়াটিয়াদের চাবি দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।