“এক আকাশের তারা তুই একা গুণিস নে…”
ছাদে বসে গলা ফাটিয়ে গান গাইছে শান্ত। সাথে গিটারের বেতাল ঝকঝকানি। সোবহান সাহেবের রুমে আওয়াজ আসছে বেশ কড়া ভাবেই। ফিসফিস করে তিনি বলতে লাগলেন কোন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে যে ওদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়েছিলাম!
সোবহান সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। সারাজীবনের আয়-রোজগার জমা করে একটি পাঁচতলা বাড়ি বানিয়েছেন। একটু কিপ্টে ধরনের লোক তিনি। বেশি আয় হবে ভেবে ব্যাচেলরদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তিনি। যদিও দিনের মধ্যে একশোবার এর জন্য তওবা করেন তিনি। মাসের চার-পাঁচ তারিখে শুধু তওবা করা ভুলে গরম পকেট আর খুশি মনে শান্তর গান শুনেন তিনি। যদি কোনো কারণে বাসা ভাড়ার তারিখ পাঁচের বদলে ছয় হয়ে যায় তাহলেই বুঝা যায় কতবড় ভদ্রলোক সোবহান সাহেব। কেউ কেউ অবশ্য এসব তোয়াক্কা না করে মাসের পনেরো তারিখকেই পাঁচ তারিখ মনে করে।
বাড়িওয়ালার একটি মাত্র সুন্দরী মেয়ে, এটি পাঁচতলা বাড়ির সকলেরই জানা। সবাই একটু ভাব নিয়ে চলে কখন ঐ মেয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। প্রায়ই সোবহান সাহেবের দরজার পাশে বিভিন্ন ধরনের গিফট বক্স, চিঠি পাওয়া যায়। ছাদে যাওয়া নিষেধ থাকলেও একটু পরপরই উঁকি দেয় কেউ না কেউ।
বাড়িওয়ালা হিসেবে দুঃখের অন্ত নেই সোবহান সাহেবের। মাঝে মাঝেই বাসা ভাড়া না দিয়ে উধাও হয়ে যায় ভাড়াটিয়ারা। হুটহাট নষ্ট হয়ে যায় সিড়ির লাইট আর গেইটের তালা। মন ভাঙার মতোই ভেঙে যায় পানির কল, অঝোরে ঝরে পরে পানি।
একদিন বাসার সবার ঘুম ভাঙলো সোবহান সাহেবের চিৎকারে। হরহামেশাই এমন ঘটনা ঘটে বলে কেউ কেউ আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে, কেউবা নিজের কাজে মন দেয়। কিন্তু সেদিন আর সোবহান সাহেবের চিৎকার থামছেই না। আস্তে আস্তে সোবহান সাহেবের ফ্ল্যাটের সামনে জড়ো হয় সবাই। সোবহান সাহেব বলতে থাকেন, গতকাল বিকালে উনার মেয়ে বান্ধবীর বাসা থেকে নোট আনার কথা বলে বের হয়ে যায়। অন্যান্য দিনের মতো, তিনি বলে দেন যেন সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসে। এদিক দিয়ে শান্ত সন্ধ্যায় আসে সোবহান সাহেবের কাছে, তার দাদী মারা গেছে বলে হাউমাউ করে কান্না করে। তাকে কিছু টাকা দিতে বলে। সোবহান সাহেবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শান্ত চলে যাওয়ার পর, শুরু হয় উনার সন্দেহ। মেয়েকে কল দিয়ে দেখেন মেয়ের ফোন বন্ধ, সাথে শান্ত’র ফোনও বন্ধ। সেদিনের পর থেকে ব্যাচেলরদের জন্য সোবহান সাহেবের বাসার গেইটও চিরতরে বন্ধ।