কথিত আছে, নতুন ঢাকায় যারা পা রাখে তারা মিরপুরে থাকে। বেশ বড় এলাকা নিয়ে গঠিত মিরপুর থানা। মিরপুর থানার উত্তরে শাহ আলী ও পল্লবী থানা, পূর্বে পল্লবী ও কাফরুল থানা, দক্ষিণে শেরেবাংলা নগর ও দারুস সালাম থানা এবং পশ্চিমে শাহ আলী ও দারুস সালাম থানা। মিরপুরের উল্লেখযোগ্য এলাকা ৬০ ফিট রোড, কল্যাণপুর, কাজীপাড়া, মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-৬, মিরপুর-৭, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪, পল্লবী, সেনপাড়া পর্বতা, শেওরাপাড়া, শিয়ালবাড়ী ইত্যাদি। 

মিরপুর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারক। ঢাকার প্রাচীন বসতির একটি প্রধান কেন্দ্র মিরপুর, যা বিখ্যাত তার ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের জন্য উল্লেখযোগ্য। 

মিরপুরের ইতিহাস অনেক পুরনো। মুঘল আমলে এই এলাকাটি সমৃদ্ধ ছিল। বর্তমান মিরপুর তার নানান মসজিদ ও প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী সময়ে মিরপুরের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এখানে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।

মিরপুর ঢাকার অন্যতম সংযুক্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সড়কপথে ঢাকার যেকোনো জায়গায় যাওয়া খুব সহজ। মিরপুর রোড, আগারগাঁও-মিরপুর ফ্লাইওভার ইত্যাদি সড়কগুলো মিরপুরের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঢাকা মেট্রোরেলের মিরপুর স্টেশন দ্রুত গতির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সুসংহত করেছে। এর ফলে ট্রাফিক জ্যাম কমাতে অনেকটা ভূমিকা রেখেছে মেট্রোরেল।

মিরপুরে বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (BUP), এবং মিরপুর বাংলা কলেজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মিরপুরের আশেপাশে কিছু প্রাইভেট স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে।

মিরপুর ঢাকার অন্যান্য এলাকার তুলনায় চিকিৎসাক্ষেত্রে বেশ অগ্রগামী। মিরপুরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ক্যান্সার হাসপাতাল দেশের চিকিৎসা সেবায় একটি মাইলফলক। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, যেমন সেলিব্রেটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতালের মিরপুর শাখা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে।

মিরপুর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। এখানে ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মিরপুর ১, ১০, ও ১১ নম্বরে বিভিন্ন শপিং মল ও মার্কেট রয়েছে, যেখানে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার লোকজনও কেনাকাটা করতে আসে। এখানে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়াম থাকায় এর আশপাশে খেলাধুলা কেন্দ্রিক বাণিজ্যও প্রচুর।

মিরপুরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো জাতীয় চিড়িয়াখানা ও জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই দুটি স্থানই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হেডকোয়ার্টার এবং মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুড থেকে শুরু করে আধুনিক রেস্টুরেন্টের খাবার মিরপুরের খাদ্য সংস্কৃতির অংশ। তাছাড়া পুরাতন ঢাকার কাবাব, চটপটি, ফুচকা, এবং নানান ধরনের মিষ্টির দোকান বেশ জনপ্রিয়। 

মিরপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। এখানে পুলিশ স্টেশন ছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নিয়মিত পুলিশ টহলের মাধ্যমে মিরপুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত করা হয়েছে। ফলে এলাকাটি বসবাসের জন্য অনেকটাই নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়।

মিরপুরে বসবাসের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাসিক এলাকা। এখানে পরিবার, শিক্ষার্থী, এবং কর্মজীবী মানুষেরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে। বাসা ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে বসবাসের জন্য জনপ্রিয় এলাকা মিরপুর। আধুনিক সুবিধা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কাজের সুযোগ মিরপুরকে বসবাসের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।

মিরপুর তার ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় এলাকা।

Comments