সাজিদ, একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। সে নিজের মতো করে থাকতে চায় বলে কোনো চাকরিতে জয়েন করেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট দু-একটা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এখন মোটামুটি ব্যবসার অবস্থা ভালোই। ঢাকার ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে মনে মনে শান্তি মিলবে এমন একটি শহরের খোঁজ করছিল। অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে আর কিছু শহরে ঘুরাফেরার অভিজ্ঞতা থেকে সে রাজশাহী শহরে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিলো। রাজশাহীতে তার কিছু স্মৃতিও ছিল, কারণ তার বাবার চাকরির সূত্রে ছোটবেলায় সে এখানে কিছু সময় কাটিয়েছে। এবার সে স্থায়ীভাবে বসবাস করার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে পা রাখল।
সাজিদের প্রথম কাজ ছিল রাজশাহী শহরের নিরিবলি পরিবেশে একটি বাসার খোঁজ করা। রাজশাহী শহর যেমন আধুনিক হয়েছে তেমনই যেন আধুনিক হয়েছে এ শহরের মানুষগুলোও। বাসা ভাড়া খোঁজার জন্য তাকে আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হলো না। বাসা ভাড়ার অ্যাপ THE TOLET থেকে সে একটি বাসা খুঁজে নিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে গিয়ে নিজের পড়াশোনার প্রতি আরেকটু আগ্রহ তৈরি হলো। সে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার জন্য ভর্তি হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস, সবুজ মাঠ এবং শান্ত পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করল। ক্লাসের পরে পদ্মা নদীর তীরে হাঁটতে যাওয়া তার প্রিয় অভ্যাস হয়ে উঠল। বিশেষ করে পদ্মা গার্ডেন এবং পদ্মা বাঁধ এলাকায় বসে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।
রাজশাহীর ঐতিহাসিক স্থানগুলো সাজিদের খুব প্রিয় হয়ে উঠলো কিছুদিনের মধ্যেই। সপ্তাহান্তে সে বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম, বাঘা মসজিদ এবং পুঠিয়া রাজবাড়ি পরিদর্শন করতে শুরু করে। এই স্থানগুলোর স্থাপত্য এবং ইতিহাস তাকে বিমোহিত করতো।
রাজশাহীতে এসে পুরানো বন্ধুদের খোঁজ করতে গিয়ে সে জানতে পারে বন্ধু সালমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তারা দুজনেই প্রায়ই পাশে কফি শপে বসে আড্ডা দিতো। এখানে তারা নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে।
চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে সাজিদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেতো যেখানে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাছাড়া ইবনে সিনা হাসপাতালেও সে কিছুবার গিয়েছে যেখানে চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক ছিলেন।
রাজশাহীর যাতায়াত ব্যবস্থা সাজিদকে খুবই স্বস্তি দিত। শহরের ভেতরে বাস, রিকশা এবং অটোরিকশায় যাতায়াত করতো সে। ঢাকার মতো যানজট ছিল না, তাই সময়মতো সব কাজ সম্পন্ন করতে পারতো। শহরের বাইরে যেতে হলে সে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতো বা বাস ব্যবহার করতো। ঢাকায় জরুরি কাজে গেলে রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিমানের সেবা নিতো।
রাজশাহী শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল প্রশংসনীয়। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং পুলিশের সক্রিয় টহল ব্যবস্থা তাকে নিরাপদ অনুভূতি দিত। একদিন গভীর রাতে সে এবং তার বন্ধুরা শহরের বাইরে থেকে ফেরার সময় পুলিশের টহল দেখলো এবং তাদের সাথে কথা বলে। সাজিদের মনে হলো, এই শহরটি বসবাসের জন্য আসলেই সেরা।
রাজশাহীতে সাজিদের জীবন ছিল শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর। শহরের জনসংখ্যার তুলনায় যানজট ছিল খুবই কম। মাঝে মাঝে অফিস আওয়ারে কিছু এলাকায় যানজট থাকত, তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সব মিলিয়ে, সাজিদের রাজশাহীতে বসবাসের অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত সুখকর। রাজশাহী শহরের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং উন্নত জীবনযাত্রার কারণে এটি তার প্রিয় শহর হয়ে উঠল।