রুমকি ছোট শহর থেকে ঢাকায় এসে একটি ভালো চাকরিতে যোগদান করেছে। একা একা একটি ভাড়া বাসায় থাকা তার পক্ষে বেশ ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া ব্যাচেলর হিসেবে বাসা ভাড়া পাওয়া তো আরও কষ্টসাধ্য। সহকর্মীর পরামর্শে সাবলেট বাসা খোঁজা শুরু করলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে একরুম ভাড়া দেওয়া হবে এমন একটি সাবলেট বাসা পেল। বাসার মালিক ফরহাদ সাহেব, মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। বউ বাচ্চা নিয়ে তার সংসার। বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় তিন রুমের মধ্যে একটি রুম সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিতে চান তিনি।
বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রথম মাসেই রুমকি বুঝতে পারলো বাসা ভাড়া নিয়ে সে কী বিরাট সমস্যায় পড়েছে। ফরহাদ সাহেবের বউ রীতা ভাবী প্রতিদিন নতুন নতুন নিয়ম বানাতে শুরু করলেন। রান্না ঘরে সকালে প্রবেশ করলে দুপুরের আগে বের হোন না। তিনি রান্না ঘরে থাকা অবস্থায় রান্না ঘরে প্রবেশ করাও নিষেধ মোটামুটি। কোনো বন্ধু বা আত্মীয় এলে তাদেরকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া নিয়েও হতো সমস্যা। কোনো কারণেই সন্ধ্যার পরে রুমকি বাসার বাইরে থাকতে পারতো না, এমনকি অফিস থেকে দেরিতে ফিরলেও নানা রকম প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো তাকে। কারণে অকারণে প্রতিদিন এমন অদ্ভুত সব নিয়ম তৈরি করতে শুরু করলেন যে, যা রুমকির পক্ষে মানা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
তাছাড়া, বাসার নিরাপত্তার অবস্থাও ছিল শঙ্কাজনক। একদিন গভীর রাতে রুমকি শুনতে পায়, ফরহাদ সাহেব বউয়ের উপর চড়াও হয়েছেন। রেগে গিয়ে তিনি রুমকির দরজায়ও আঘাত করতে শুরু করলেন। ভয়ে রুমকি কাঁপতে ছিল, সারারাত ঘুম হয়নি তার। সকালে রীতা ভাবীর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি স্রেফ হেসে বললেন, "এ শহরে এসব ছোটখাটো ঘটনা ঘটে থাকে, তোমাকে মানিয়ে নিতে হবে।"
এসব ছাড়াও বাসার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি রুমকিকে হতাশ করে তুলেছে। চুক্তির সময় যা বলা হয়েছিল, কয়েকমাস যেতে না যেতেই রীতা ভাবী বেশি টাকা দাবি করতে শুরু করলো। রুমকি এ বিষয়ে আপত্তি করলে, রীতা ভাবী নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে বাসা ছাড়তে বললো।
সহ্য করতে না পেরে সে আবার THE TOLET অ্যাপে নতুন বাসা খুঁজতে শুরু করলো। কয়েকদিনের মধ্যেই সে একটি ভালো বাসা পেয়ে যায়। সে বাসায় গিয়ে বাসার মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে রুমকি বুঝতে পারে তারা সবাই খুবই সহানুভূতিশীল ও বন্ধুসুলভ। রুমকি নতুন বাসায় উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যদিও সাবলেট বাসায় তার অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ, কিন্তু এই নতুন বাসা তাকে আবার শান্তি এনে দিয়েছে।
রুমকি বুঝতে পারলো, সাবলেট বাসা নেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। পুরানো অভিজ্ঞতা তাকে শিক্ষা দিয়েছে, শুধুমাত্র ভাড়ার অঙ্ক নয়, বরং বাসার পরিবেশ ও নিরাপত্তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বাসায় এসে সে আবার তার জীবনকে সঠিকভাবে সাজিয়ে নিতে পারলো।