পুঁজিবাদের এই পৃথিবীতে এমন একটি স্থান আছে যেখানে ৫০০ বছর পার হলেও বাড়ি ভাড়া আছে আগের মতোই, অর্থাৎ শত শত বছরেও বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন গতি এই স্থানের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

এমন একটি শহর রয়েছে যেখানে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়ি ভাড়া বাড়েনি। এই রহস্যময় শহরের নাম হলো ফুগেরেই, যা জার্মানির অগসবার্গ শহরে অবস্থিত।

ফুগেরেই বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সামাজিক আবাসন প্রকল্প, যেখানে ১৫২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাসিন্দাদের ভাড়া খুবই সামান্য এবং প্রায় অপরিবর্তিত। এ শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন ধনী ব্যাঙ্কার জাকোব ফুগার। তিনি দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অক্ষম মানুষদের জন্য বাসস্থানের সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা এখনও চলমান রয়েছে।

ফুগেরেইয়ের বাসিন্দারা বছরে মাত্র ১ রাইনিশ গুল্ডেন অর্থাৎ আজকের হিসেবে কয়েক ইউরোর সমান ভাড়া দিয়ে থাকেন। এই ভাড়া পদ্ধতি ১৫২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ভাড়ার পরিমাণ এতটাই সামান্য যে আধুনিক অর্থনীতির পরিবর্তনও এর ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ফুগার পরিবার একটি দাতব্য প্রকল্প হিসেবে ফুগেরেই প্রতিষ্ঠা করে, এবং এর উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষদের জন্য স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা। এখানে বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মানতে হয়, যেমন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী হওয়া এবং প্রতিদিন প্রার্থনা করা। ফুগার পরিবারের তহবিল এবং সম্পত্তির পরিচালনার কারণেই ৫০০ বছরেও ভাড়ার পরিমাণ বাড়েনি।

বর্তমানে ফুগেরেই একটি ট্যুরিস্ট আকর্ষণ হিসেবেও পরিচিত। এটি একটি জীবন্ত সংগ্রহশালা, যেখানে মানুষজন প্রাচীন যুগের বাসস্থান ব্যবস্থার একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। এখানে বাস করা মানে শুধু একটি স্থানে থাকা নয়, বরং একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক কাঠামোর অংশ হওয়া।

ফুগেরেইয়ের গল্প থেকে বুঝা যায়, একটি সমাজ যদি আর্থিক উন্নয়নের চেয়ে সামাজিক কল্যাণকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তবে শত শত বছর ধরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব।

Comments