ঢাকার একটি অভিজাত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ধানমন্ডিকে। ধানমন্ডি ৩২, এলিফ্যান্ট রোড, রবীন্দ্র সরোবর, ওয়েস্ট ধানমন্ডি, জিগাতলা ইত্যাদি ছোট ছোট এরিয়াগুলো নিয়ে গঠিত ধানমন্ডি। অবসর সময় কাটানোর জন্য রয়েছে জনপ্রিয় ধানমন্ডি লেক। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র সব মিলিয়ে ধানমন্ডি একটি উত্তম বসবাসের স্থান।
এটি মূলত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে শুধু আবাসিক না, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্যও ধানমন্ডী আজকের দিনে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ধানমন্ডির ইতিহাস খুব বেশি পুরনো না হলেও এর ঐতিহ্য উল্লেখযোগ্য। ১৯৫০ এর দশকে এটি মূলত একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে ধানমন্ডি এলাকায় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করতেন। স্বাধীনতার পরেও ধানমন্ডি তার আকর্ষণ ধরে রেখেছে এবং ক্রমাগত আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে একটি বহুমুখী এলাকার রূপ নিয়েছে। এই এলাকাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পায়, যেখানে এখন 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ধানমন্ডি ঢাকার অন্যতম কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোর একটি, যার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। এখানে মেইন সড়ক ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে শুরু করে ধানমন্ডী লেকের আশেপাশের রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। ধানমন্ডি থেকে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, যেমন গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, কিংবা মতিঝিল যাতায়াত করা সহজ। নিকটবর্তী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সদরঘাট থেকে নৌপথেও সহজেই যাতায়াত করা যায়। এছাড়া বাস সার্ভিস, রিকশা, এবং অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে ধানমন্ডি ঢাকার অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
ধানমন্ডি ঢাকার অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সাউথ ব্রিজ স্কুল, স্কলাস্টিকা, ডিআইএউ, এবং বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ। এছাড়া এই এলাকায় সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর পাশাপাশি আছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের স্কুল, কলেজ এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষার মানকে উঁচুতে ধরে রেখেছে।
ধানমন্ডি এলাকায় চিকিৎসা সুবিধার ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। এখানে ল্যাবএইড হাসপাতাল, ইবনে সিনা এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মতো বিখ্যাত হাসপাতাল রয়েছে, যা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করে। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারও ধানমন্ডিতে অবস্থিত, যা সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে।
ধানমন্ডি শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা নয়, এটি একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, সায়েন্স ল্যাব, এবং রাপা প্লাজার আশপাশের এলাকাগুলোতে ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিং মল রয়েছে। স্যাটেলাইট সিটি মার্কেট এবং সীমান্ত স্কয়ার ধানমন্ডির অন্যতম প্রধান শপিং গন্তব্য। পাশাপাশি এই এলাকায় রয়েছে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, ফ্যাশন হাউস এবং ইলেকট্রনিকসের দোকান, যা তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
ধানমন্ডি লেক ধানমন্ডি সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর একটি। এটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের নয়, পুরো ঢাকা শহরের মানুষের কাছে প্রিয় একটি স্থান। ধানমন্ডি লেকের আশপাশে হেঁটে বেড়ানো, নৌকায় চড়া এবং সন্ধ্যায় আড্ডা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত।
ধানমন্ডি রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেগুলোর জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। এখানে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেমন কন্টিনেন্টাল, ইতালিয়ান, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান এবং স্থানীয় বাঙালি খাবার। ধানমন্ডি ২৭-এর ফুড স্ট্রিট এবং সীমান্ত স্কয়ার এলাকায় রয়েছে নানান ধরনের ক্যাফে, ফাস্ট ফুড আউটলেট এবং খাবারের দোকান যা রেস্তোরাঁ প্রেমীদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ধানমন্ডিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। এখানে পুলিশ টহল এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। বসবাসকারী অভিজাত শ্রেণির কারণে ধানমন্ডিতে প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানির সেবা ব্যবহারের হারও বেশি।
ধানমন্ডি ঢাকার অন্যতম অভিজাত আবাসিক এলাকা হওয়ায় এখানে বসবাসের সুবিধা অত্যন্ত উন্নত। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, এবং খাবারের স্থানসহ সব ধরনের সুবিধা ধানমন্ডিতে পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য এলাকার তুলনায় ভাড়ার পরিমাণ কিছুটা বেশি। ধানমন্ডি এলাকার আবাসিক ভবনগুলোর ডিজাইন এবং অবকাঠামো আধুনিক হওয়ায় এটি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী স্থান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধানমন্ডি তার ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে এক মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে, যা বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের কাছে একটি প্রিয় স্থান হিসেবে বিবেচিত।