নগরায়ন ও বিশ্বায়নের এ যুগে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। তুলনামূলক উন্নত জীবনযাপন অথবা জীবিকার তাগিদে নিজের বসতভিটা ছেড়ে সবাই পাড়ি জমায় শহরে। দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে মানুষ থাকতে শুরু করেছে ভাড়া বাড়িতে। বাসা ভাড়া পেতে মুখাপেক্ষী হতে হয় নানান ঝামেলার। নিজের কর্মস্থল থেকে বাসাটি কতদূর, যাতায়ত ব্যবস্থা কেমন, সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কতদূর, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হয়। তাই বাসা ভাড়া নেওয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়া হিসেবে কি কি বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত, চলুন জেনে নেয়া যাক।

বাসার ভিতর ও বাহির পর্যবেক্ষণ করাঃ একনজরে বাসার ভিতরের অবস্থা দেখতে হবে, আপনার চাহিদানুযায়ী রুমগুলো ঠিক আছে কিনা। বাথরুমের অবস্থা এবং দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। জানালা দেখুন, ঘরে পর্যাপ্ত আলোবাতাস আসে কিনা খেয়াল করুন। আমাদের জীবনযাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ চাহিদার মধ্যে রয়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস। বাড়িতে সব সময় পানি থাকে কি না এবং বাসার সব সংযোগ থেকে পানি আসে কি না পরীক্ষা করে নিন। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাসায় কতগুলো বৈদ্যুতিক সকেট আছে, লাইট, ফ্যান লাগানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা দেখতে হবে। নিজস্ব গাড়ি থাকলে পার্কিংয়ের জন্য গ্যারেজ আছে কিনা দেখে নিতে পারেন। বাসায় ওঠার আগে বেসিনের কল নষ্ট বা দেয়ালের রঙ নষ্ট হয়ে হয়েছে কিনা দেখুন। নষ্ট থাকলে বাড়িওয়ালাকে দিয়ে এগুলো মেরামত করিয়ে নিতে পারেন।

বাসার মালিক সম্পর্কে ভালোভাবে জানাঃ আপনি যার সাথে কথা বলছেন তিনি আসলেই বাসার মালিক কিনা ভালোভাবে জেনে নিন। বাসার মালিক যদি ঐ বাড়িতেই থাকেন তাহলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। বাড়িটি কিছুদিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে কিনা জানুন, বিক্রি হলে হয়তো আবার বাসা পাল্টানোর ঝামেলায় পড়তে হবে।

যাতায়াত ব্যবস্থাঃ বাসা নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই খেয়ালা রাখা উচিত বাসাটি থেকে আপনার কর্মস্থলে বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাতায়াত করা কতটা সহজ। পাশাপাশি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যাতায়াতের কথাও মাথায় রাখতে হবে। বাজার, শপিংমল, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি স্থান ও প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু কাছাকাছি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ বাসাটি নেওয়ার পূর্বে ঐ এলাকার পরিবেশ কেমন জেনে নেওয়া উচিত। সকাল সন্ধ্যা অথবা রাতে যেকোনো সময় যেন নিরাপত্তার সাথে চলাচল করা যায় এমন পরিবেশ আছে কিনা যাচাই করুন। বাসাটি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন হলে ভালো হয়। তাছাড়া গেইটে নিরাপত্তা প্রহরী আছে কিনা, হাঁটার রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইট আছে কিনা দেখে নেওয়া উচিত।

আশেপাশের পরিবেশঃ আপনার পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী থেকে শুরু করে উপর তলার ফ্ল্যাটে অথবা নিচ তলার ফ্ল্যাটে কারা থাকছে জেনে নিতে পারেন। আশেপাশের রাস্তায় বা গলিতে ময়লার স্তূপ থাকলে ঐ এলাকায় বাসা না নেওয়াটাই উত্তম।

বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও তথ্য ফরম পূরণঃ বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চুক্তিপত্র করে নিতে পারেন। অনেক সময় বাড়িওয়ালার কিছু না বলে যখন-তখন বাড়ির ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কয়েক মাস পরেই ভাড়ায় যোগ হয় বাড়তি টাকা। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত থাকতে ভাড়া নেয়ার চুক্তিপত্র করে নিতে পারেন। চুক্তিতে বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ, অন্যান্য ইউটিলিটি সুবিধার বিবরণসহ যাবতীয় বিষয় লিপিবদ্ধ আছে কি না দেখে নিন। তাছাড়া বর্তমানে প্রতিটি বাড়িওয়ালা তার নিজের ও ভাড়াটিয়ার তথ্য নির্ধারিত ফরমে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বাধ্য। বাড়ি ভাড়া নেয়ার পর দ্রুত বাড়িওয়ালার সাথে সাথে ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনিও আন্তরিক হয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্য ফরম পূরণ করুন।

Comments